ডায়বেটিস মানে কি?

সর্বশেষ সম্পাদনা: ১০ ডিসেম্বর ২০২১, দুপুর ০২:৫৭

ডায়বেটিস একটি নিরাময় অযোগ্য রোগ। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এবং যত ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সমস্যা তত কম হবে। ডাক্তাররা প্রতিনিয়তই ডায়বেটিস রোগীদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন- শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে থাকুন, মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করুন, লম্বা সময় না খেয়ে থাকবেন না ইত্যাদি। কিন্তু বলা যত সহজ করা এত সহজ না। ফলে, ডায়বেটিস রোগীদের বড় একটা অংশই নিয়ম মানেন না। ফলাফল হল বিভিন্ন রকম জটিলতা। নিয়ম মানার এই প্রবণতা কমানোর একটা উপায় হল নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী করা। এটা প্রমানিত যে, যখন রোগী নিজের রোগ সম্পর্কে ভালো করে জানবেন তখন ডাক্তারের পরামর্শ ভালো বুঝবেন এবং মানবেন। এজন্যই খুবই সহজবোধ্য বাংলায় ডায়বেটিস হলে শরীরে কি সমস্যা হয় তা আলোচনা করব। কোন অস্পষ্টতা থাকলে মন্তব্য করুন এবং আমরা চেষ্টা করব তা দূর করতে।

মূল সমস্যাটা কি?

সোজাভাবে বললে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হয়ে যায়। এবং টানা রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে বিভিন্নরকম সমস্যা তৈরী হয়। সমস্যা কি হয় তা ভালোভাবে বুঝতে হলে আগে জানতে হবে স্বাভাবিক অবস্থাটা কি? (ভয় নেই, খুব বিস্তারিত আলোচনায় যাব না। একদম সাধারণভাবে যতটুকু জানতে হয়।)

ইনসুলিন কি?

ইনসুলিন প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয় থেকে রক্তে নিঃসৃত হয়। এর প্রভাবে রক্তের গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করতে পারে। ফলাফল হল রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমা এবং কোষগুলো গ্লুকোজ থেকে শক্তি পায়
রক্তে এর পরিমান বাড়ার ফলে রক্তের গ্লুকোজ এর মাত্রা কমে।
ইনসুলিনের কাজ করার পদ্ধতি (mechanism of action)

সুস্থ্য শরীরে ইনসুলিন কিভাবে কাজ করে?

আমরা যে খাবার খাই তা সাধারণত বড় ৩টা ভাগে ভাগ করা যায়- শর্করা, আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাবার। এছারা কিছু ভিটামিন, মিনারেলও থাকে। শর্করার উদাহারণ হল ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি। এগুলো খাওয়ার পর হজমের পর রক্তে গ্লুকোজ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে যখন রক্ত গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে তখন প্যানক্রিয়াস নামক অন্তঃখরা গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন নিসঃরণ্নের পরিমানও বাড়ে। ফলে, এই রক্তের গ্লুকোজ লিভার বা কলিজা থেকে শুরু করে অন্যান্য অংগের কোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে। লিভার এই গ্লুকোজ জমা করে এবং অন্যান্য কোষ ব্যবহার করে। এর ফলাফল হল শরীরের সমস্ত কোষ শক্তি পায় এবং একই সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজের পরিমান নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুস্থ্য শরীরে ইনসুলিনের কর্মপদ্ধতি যখন ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ে তখন শরীরের চর্বিগুলোতে ট্রাইগ্লিসারাইড জমা হয়। এবং মাত্রা কমে গেলে চর্বি থেকে বের হয়ে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার দুইবেলা খাবারের মধ্যের সময়টাতে গ্লুকোজের পরিমান কমতে থাকে। ইনসুলিনের পরিমাণ কমতে থাকে ফলে লিভার থেকে গ্লুকোজ বের হয় এবং রক্তে এর পরিমান নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে।  এবং একই সাথে চর্বি থেকে ট্রাইগ্লিসারাইড বের হয়। এ সবই স্বাভাবিক অবস্থায় ঘটে। যখন  যেকোন কারণে ইনসুলিন তৈরী কমে যায় বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায় তখন বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরী হয়।  আর এটাই ডায়বেটিস ।

ডায়বেটিস রোগীর ক্ষেত্রে কি ঘটে?

ডায়বেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ইনসুলিন কম থাকে বা কম কার্যকর থাকে। ফলাফল, রক্তে শর্করা এবং চর্বির মাত্রা বেড়ে যায়। কিভাবে? খাওয়ার পর যখন ভাত, রুটি, পাউরুটি ইত্যাদি থেকে রক্তে শর্করা আসে (গ্লুকোজ হিসেবে), রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে থাকে। কিন্তু লিভার এবং শরীরের অন্যান্য কোষ/অংগ এই গ্লুকোজকে খাবার হিসেবে/জমা করার জন্য গ্রহণ করে না। (ইনসুলিন নাই)। ফলে, রক্তে বেশি গ্লুকোজ থাকে কিন্তু শরীরের কোষগুলো না খেয়ে থাকে। অন্যদিকে চর্বি থেকে ট্রাইগ্লিসারাইড বের হয়। ট্রাইগ্লিসারাইড থেকে কিটোন বডি তৈরী হয়। যা বিভিন্ন কোষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তবে, ইনসুলিন যদি একেবারে কমে যায়, তখন শরীর তৈরী হওয়া সব ট্রাইগ্লিসারাইড ব্যবহার করতে পারে না। তখন কিটোন বডি শরীরে জমা হয়।  সেটা ডায়বেটিস রোগীর জন্য আরেক ধরনের সমস্যা তৈরী করে। সারমর্ম হলো, শরীরের কোষগুলো না খেয়ে থাকে। কিন্তু একই সাথে রক্তে শর্করা ও চর্বির মাত্রা বেড়ে যায়। তবে, এ সব সমস্যারই সমাধান আছে। ঔষধ এবং ইনসুলিনের মাধ্যমে। নিয়ম-কানুন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।

Leave a Comment