থ্যালাসেমিয়া কি?
থ্যালাসিমিয়া রক্তের একটা রোগ। এ রোগ হলে রক্তের লোহিত রক্ত কনিকার ভেতরে থাকা একটা অনু, হিমোগ্লোবিন সঠিকভাবে তৈরী হয় না। হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন পরিবহনের মূল মাধ্যম। হিমোগ্লোবিন ঠিকভাবে তৈরী না হলে রক্তের লোহিত রক্ত কনিকা ভেংগে যায়।
এই রোগ কাদের হয়?
এই রোগ যেকোন ব্যক্তির হতে পারে। ছেলে বা মেয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাবা-মা এর থেকে জন্মগত ভাবে পায়। কখনো কখনো নতুন ভাবে হতে পারে। অনেকে এজন্য বাবা বা মাকে দায়ী করেন। কিন্তু এটা সত্য নয়।
এই রোগে কি সমস্যা হয়?
রক্তের লোহিত রক্ত কনিকা ভেংগে যাওয়ার ফলে কয়েকটি ঘটনা ঘটে-
১। রক্তে লোহিত রক্ত কনিকা কমে যায়। ফলে, রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করার ক্ষমতা কমে যায়।
এর ফলে বাচ্চার গায়ের রঙ আস্তে আস্তে সাদা হয়ে যায়, বাচ্চা দুর্বল বোধ করে, খাওয়া-দাওয়া বা খেলাধূলা কমিয়ে দেয়। বাচ্চার বৃদ্ধিও কমে/থেমে যায়।
২। শরীর বেশি বেশি রক্ত কনিকা তৈরী করার চেষ্টা করে। ফলে, যে সকল হাড়ে রক্ত তৈরী হয় সেগুলোর আকার পরিবর্তন হয়, চেহারা পরিবর্তন হয়। অনেক সময় হাড় ভেংগেও যায়।
৩। হাড় দিয়ে না প্রয়োজন পুরণ না হলে অন্যান্য অংগ যেমন- কলিজা(Liver), প্লীহা (Spleen) ইত্যাদি এই কাজে ব্যবহার হয়। ফলাফল, পেটে চাকা তৈরী হয়, যা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং খাওয়ায় সমস্যা, ব্যথা ও অন্যান্য অনেক সমস্যা তৈরী করে।
৪। রক্ত ভেংগে অনেক বিষাক্ত পদার্থ রক্তে চলে আসে। এর মধ্যে প্রধান হল লোহা (iron) এবং বিলিরুবিন (bilirubin)। এই লোহা শরীরে বিভিন্ন অংশে জমা হয়ে জটিলতা তৈরী করে আর বিলিরুবিন অতিরিক্ত হলে জন্ডিস দেখা দেয়।
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা তৈরী হয় যার ফলে স্বাভাবিক জীবন চালানো রোগীর জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এই রোগ কয় ধরনের হয়?
লক্ষণের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে থ্যালাসিমিয়াকে তিন ধরনে ভাগ করা হয়-
১। গুরুতর/তীব্র থ্যালাসেমিয়া
২। মাঝারি তীব্র থ্যালাসেমিয়া
৩। মৃদু থ্যালাসেমিয়া
এই রোগটা কিভাবে প্রকাশ পায়?
প্রকাশ করার সময় নির্ভর করে থ্যালাসিমিয়ার ধরনের উপর। তীব্র হলে সাধারণত রোগটি ২ বছরের আগে প্রকাশ পায়। আর মাঝারি তীব্র হলে আরো দেরিতে প্রকাশ পায়। আর, যদি মৃদু হলে প্রকাশই পায় না। এ ধরনের থ্যালাসিমিয়া ঘটনাক্রমেই সাধারণত ধরা পড়ে।
প্রথম দিকে সাধারণ দুর্বলতা, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, খেলাধুলা না করা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে বার বার কাশি বা শ্বাসকষ্ট নিয়েও বাচ্চা হাসপাতালে আসতে পারে।
থ্যালাসিমিয়া আছে এমন সন্দেহ হলে কি করা উচিত?
প্রথমেই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। সাধারণ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই এ রোগ সনাক্ত ও নিশ্চিত করা সম্ভব।
আগামী নিবন্ধগুলোতে চিকিৎসা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আশা রাখি। আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য করুন। চেষ্টা করব যথাযথ উত্তর দিতে।
এই বিষয়ে আমাদের অন্য প্রবন্ধগুলো দেখতে পারেন-
১। থ্যালাসেমিয়া পার্ট ২ঃ চিকিৎসা
২। থ্যালাসেমিয়া পার্ট ৩ঃ খাবার ও প্লীহাকর্তন (splenectomy)
৩। থ্যালাসেমিয়া পার্ট ৪ঃ প্রতিরোধ
৪। থ্যালাসেমিয়া পার্ট ৫ঃ খাবারের তালিকা
ডাঃ ফাহিম আহমাদ ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দুই বছরের অধিক সময় গ্রামে কাজ করার পর শিশু রোগ সম্পর্কে উচ্চতর পড়াশুনা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এমডি(শিশু) শেষ করার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এয় জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) হিসেবে কর্মরত আছেন।
2 thoughts on “থ্যালাসেমিয়া পার্ট ১: একটি জন্মগত/বংশগত রক্তস্বল্পতা”