শিশুর যেকোন পরিবর্তনই বাবা-মাকে উত্তেজিত করে। আর দাঁত তো বিরাট ব্যাপার। শিশুর হাসিটা হঠাৎ করেই আরো সুন্দর হয়ে উঠে। কামড় দেয়ার প্রবণতা তৈরি হয় (সেটা মাঝে মাঝে ব্যথা দিলেও দেখতে ভালোই লাগে)। কিন্তু একই সাথে যত্ন না নিলে অনেক সময়ই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, এ বিষয়ে শিশুর বাবা-মায়ের অনেক জিজ্ঞাসা থাকে। এ সংক্রান্ত কিছু কমন প্রশ্ন ও তার উত্তর নিচে দিচ্ছি। আশাকরি উপকার হবে। শিশুর দাঁত নিয়ে যদি প্রশ্ন থাকে পৃষ্ঠার শেষের দিকে থাকা ফরম ফিলাপ করে পাঠিয়ে দিন। আমরা যতদ্রুত সম্ভব নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
শিশুদের দাঁত মাজার নিয়ম কি?
শুধু শিশু নয়, সবার জন্যই একই নিয়ম। প্রতি ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে দুইবার, প্রতিবার ২ মিনিট করে দাঁত মাজতে হবে (একবার সকালে এবং একবার রাতে, বিছানায় যাওয়ার আগে)। রাতে শোয়ার আগে দাঁত মাজা অত্যন্ত জরুরী।
দাঁত মাজার সময় ব্রাশ মাড়ির সাথে ৪৫ ডিগ্রী অর্থাৎ একটু কাত করে ধরতে হবে এবং উপরে নিচে মাজতে হবে। দাঁতের বাইরের অংশ, ভিতরের অংশ এবং উপরের অংশ আলাদা করে মাজতে হবে।
লক্ষ্য রাখতে হবে যে, আমাদের মুল উদ্দেশ্য হবে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল মাজা।
টুথব্রাশ প্রতি ৩-৪ মাস পর পর পরিবর্তন করতে হবে। বা আরো আগে পরিবর্তন করতে হবে যদি আঁশগুলো (bristle) ভেঙ্গে যাওয়া শুরু করে।
শিশুর টুথপেস্টঃ কখন থেকে এবং কতটুকু ব্যবহার করতে হবে?
যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায় তত ভালো। শুরুতে ভেজা নরম কাপড় দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা যায়। এরপর বাচ্চাকে অল্প পরিমাণ ফ্লোরাইডসমৃদ্ধ পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজতে দিতে হবে। বাচ্চাকে শেখাতে হবে যেন না খেয়ে তৈরি হওয়া ফেনা ফেলে দেয়।
প্রশ্নের উপর ক্লিক করলে বা টাচ করলে প্রশ্নের উত্তরটি বের হয়ে আসবে।
শিশুর শিশুর টুথব্রাশ কেমন হওয়া উচিত?
নরম আঁশের ছোট মাথাওয়ালা ব্রাশ। ব্রাশ দিয়ে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখলে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া প্লাক (plaque) তৈরি হতে পারে না। ব্যাকটেরিয়া প্লাক পরবর্তীতে দাঁতে ক্যাভিটি তৈরি করে।
টুথব্রাশ প্রতি ৩-৪ মাস পর পর পরিবর্তন করতে হবে। অথবা আরো আগেই পরিবর্তন করতে হবে যদি আঁশগুলো (bristle) ভেঙ্গে যাওয়া শুরু করে।
শিশুর দুধ দাঁত কি আসলেই গুরুত্বপুর্ন? এগুলো তো পড়েই যায়।
শিশুর দাঁত (মানে ‘দুধ দাঁত) খুবই গুরুত্বপুর্ণ। এগুলো শিশুকে সঠিকভাবে কথা বলতে এবং খাবার চিবাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, এগুলো স্থায়ী দাঁত উঠার রাস্তা তৈরি করে দেয়। যদি দুধ দাঁত আকাবাকা হয়, ক্যাভিটি থাকে তাহলে স্থায়ী দাঁতেরও এই সমস্যা থাকতে পারে। এমন ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা করালে সমাধান সম্ভব।
শিশুকে প্রথম কখন দাঁতের ডাক্তার দেখানো দরকার?
সাধারণত আমরা কোন সমস্যা না হওয়া পর্যন্ত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাই না। অনেকক্ষেত্রে এরই মধ্যে দাঁতের কিছু ক্ষতি হয়ে যায় যা আর সমাধান করা সম্ভব হয় না। এজন্য শুরু থেকেই দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অভ্যাস করা ভালো। এবং এটা শুরু করতে হবে যখন শিশুর প্রথম দাঁত উঠা শুরু করবে তখন থেকে। প্রথম জন্মদিন আসার আগে অন্তত একটা ভিজিট দিয়ে দিলে ভালো। এবং পরবর্তীতে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ভিজিট করলে চলবে।
অন্তত দাঁতের কোন সমস্যা হলে দেরি না করে সংগে সংগে দাঁতের ডাক্তার দেখাতে হবে।
শিশুর দাঁতে ব্যথা হলে কি করবো?
প্রথমেই কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে মুখে রাখতে হবে (লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বেশি পরিমানে খেয়ে না ফেলে)। এছাড়া, ঠান্ডা সেক দেয়া যায় গালের উপর দিয়ে। এবং প্যারাসিটামল সিরাপ (Napa, Ace, Renova ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়) খাইয়ে দিয়ে অতিসত্ত্বর একজন দাঁতের ডাক্তারকে দেখাতে হবে।
আঙ্গুল চোষা বা চুষনি ব্যবহার করা কি ক্ষতিকর?
আঙ্গুল অনেক সময়ই ময়লা ও জীবানুর উৎস হিসেবে কাজ করে। চুষনির বিষয়টিও তাই।
শুরু থেকেই বাচ্চাকে আঙ্গুল চোষায় নিরুৎসাহিত করতে হবে। বেশিরভাগ বাচ্চাই ধীরে ধীরে আঙ্গুল চোষা বন্ধ করে দেয়। তবে, ৩ বছর বয়স হওয়ার পরও আঙ্গুল চোষা বন্ধ না করলে বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে দাতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কেমন খাবার শিশুর দাঁতের জন্য ভালো?
পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার শিশুর দাঁতের জন্য উপকারী। সবুজ শাকসবজি, হলুদ ফলমুল, ছোট মাছ ইত্যাদি খাবারে অন্তর্ভুক্ত থাকা জরুরী। উন্নত দেশগুলোর অনেক গুলোতেই খাবার পানিতে দাঁতের জন্য জরুরী ফ্লোরাইড মিশ্রিত থাকে (আমাদের দেশে এটা এখনও সম্ভব না)। এছাড়া টুথপেস্টেও ফ্লোরাইড থাকে। আমরা ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেস্ট বেছে নিতে পারি। এছাড়া চিনি ও চিনিসমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া এবং খাওয়ার পর কুলি করে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আঘাত লেগে শিশুর স্থায়ী দাঁত পড়ে গেলে কি করবো?
প্রথম কথাই হলো নিজে শান্ত থাকতে হবে। প্রথমে দাঁতটি মাথার দিকটা ধরে (গোড়া না) যেখান থেকে উঠে গেছে সেখানে বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এবং একজন দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
দাঁত যদি জায়গামত বসিয়ে দেয়া সম্ভব না হয় তবে একটা গ্লাসে অল্প দুধ নিয়ে দাঁতটি তাতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এবং অতিদ্রুত শিশুকে (এবং গ্লাসে রক্ষিত দাঁত) দাঁতের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
এই বিষয়ে আরো কিছু কি আপনি জানতে চান? আমাদের প্রশ্ন করুন।
ডাঃ ফাহিম আহমাদ ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দুই বছরের অধিক সময় গ্রামে কাজ করার পর শিশু রোগ সম্পর্কে উচ্চতর পড়াশুনা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এমডি(শিশু) শেষ করার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এয় জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) হিসেবে কর্মরত আছেন।
১.শিশুর দাঁত দেরিতে উঠে কারন কি..? এতে কোন সমস্যা নাকি,,?
আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। কিছু রোগের ক্ষেত্রে দাঁত দেরিতে উঠতে পারে। যেমন- অপরিনত জন্ম হওয়া (Prematurity), জন্মের সময় ওজন কম থাকা, অপুষ্টি, ডাউন সিন্ড্রোম ইত্যাদি। তবে, সবচেয়ে বেশি ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিকভাবেই ঘটতে পারে। বিশেষ করে যদি মা-বাবার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে থাকে।
যদি কোন রকম অসুস্থতা না থাকে তাহলে চিন্তিত হওয়ার কারণ নাই। প্রথম দাঁত উঠার ক্ষেত্রে অনেক সময় ১০ মাসও লাগতে পারে। এর বেশি দেরি হলে বা অন্য কোন সমস্যা থাকলে একজন ডেন্টাল সার্জনএর পরামর্শ নিন।