ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ। কোন সন্দেহ নাই। এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে, ধীরে ধীরে এই ভিটামিনের আরো অনেক কাজ খুজে পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ প্যানডেমিকের সময়টাতে দেখা গেল যাদের ভিটামিন ডি-এর অভাব ছিল তাদের ক্ষেত্রে তীব্রতা বেশি পাওয়া যাচ্ছিল (কোভিড-১৯ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এখানে ক্লিক করুন)। এমনটা অবশ্য যৌক্তিক। কারণ, অন্যান্য গবেষনা থেকে আমরা আগেই জানতাম যে এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য জরুরী একটা জিনিস। অন্যদিকে, দেশে হওয়া গবেষনায় প্রমানিত যে বাংলাদেশের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি এমনিতেই কম থাকে ( https://www.scirp.org/journal/paperinformation.aspx?paperid=80730 )। কাজেই ভিটামিন ডি এর বিষয়ে আমাদের সবারই সচেতন হওয়া দরকার। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে।
কিভাবে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়?
সচেতন লোকজন জানেন এই ভিটামিন সুর্যের আলোর প্রতিক্রিয়ায় আমাদের চামড়ায় তৈরি হয়। এজন্যেই এর নাম sunshine vitamin। পরবর্তীতে আমাদের লিভার (কলিজা) ও কিডনিতে এটি পরিবর্তিত হয়ে সম্পুর্ণরুপে সক্রিয় হয়। কাজেই, যারা একেবারেই ঘরের বাইরে যান না বা বোরকা পড়ে/ সানস্ক্রিন লাগিয়ে বাইরে যান তারা এই ভিটামিনের অভাবে ভোগার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
কতটুকু সুর্যের আলো দরকার হবে?
একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। তবে, দুপুরের রোদে, ৩০মিনিটের চেয়ে বেশি, সপ্তাহে কয়েকবার, সরাসরি গায়ে রোদ পড়লে প্রয়োজন মিটে যায়। উল্লেখ্য, শীতের রোদ থেকে, সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে, কাচের ভিতর দিয়ে আসলে, আকাশ মেঘলা থাকলে, গায়ের রঙ কালো হলে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না। কাজেই, বোঝা যাচ্ছে রোদ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ তৈরি হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত পুরন করতে হয়। এ কারণেই হয়তো আমাদের দেশে এত রোদ পাওয়ার পরও এই ভিটামিনের অভাব দেখা যায়।
০৬ মাসের কম বয়সী বাচ্চাদের সরাসরি রোদে দেয়া নিষেধ। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন আসবে মায়ের বুকের দুধ থেকে।
কতটুকু ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়?
সাধারনভাবে ১ বছর বয়স পর্যন্ত ৪০০ ইউনিট, ১-৭০ বছর পর্যন্ত ৬০০ ইউনিট, ৭০ বছরের পর ৭০০ ইউনিট ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত ৪০০ ইউনিট, দুগ্ধদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫০০ ইউনিট ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। উল্লেখ্য, গর্ভবতী মায়েদের যেকোন ঔষধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী। সাধারণত, গর্ভবস্থা ও তার পুর্বের চেকআপএর সময়ই প্রসুতিবিশেষজ্ঞরা ভিটামিন কখন, কিভাবে খেতে হবে তা জানিয়ে দেন।
আগেই যেমন উল্লেখ করেছি সুর্যের আলো থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি বেশিরভাগ লোকই পায় না। এ কারণে আমরা এই ভিটামিনের জন্য খাবারের উপর নির্ভরশীল। দুধ, দুধজাতীয় খাবার, ঘি, ডিমের কুসুম, মাছের তেল, গোস্ত, কলিজা ইত্যাদিতে ভিটামিন ডি থাকে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ডি যোগ করা বাধ্যতামুলক। ফলে, তারা সহজেই খাবারের মাধ্যমেই পেয়ে যায়। আমাদের দেশে এখনো এটাকে আইন করে বাধ্যতামুলক করা হয় নি (ভিটামিন এ যোগ করা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে ২০১৩ সালে)। ফলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাঝে মাঝে এই ভিটামিন খাওয়া উচিত।
এই ভিটামিনএর অভাব হলে কি হয়?
প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকার জন্য জরুরী হলেও এর আসল কাজ কিন্তু হাড় ও দাঁত শক্ত করা। কাজেই, কারো যদি এই ভিটামিন বেশি কম থাকে তখন হাড় ও দাঁত দুর্বল হয়ে পড়ে। বাচ্চাদের রিকেটস, বড়দের অস্টিওপরোসিস নামে রোগ দেখা দেয়। এছাড়াও হাড়ের দুর্বলতার কারণে ব্যথা, অল্প আঘাতেই হাড় ভেংগে যাওয়ার মত আরো অনেক সমস্যা দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ত্রুটির জন্য বার বার ইনফেকশন হওয়া, এজমার সমস্যা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদিও দেখা দেয়।
ভিটামিন ডি বেশি খেয়ে ফেললে কি কোন সমস্যা আছে?
আছে।
এই ভিটামিন শরীরের জন্য জরুরী সন্দেহ নাই। তবে, অতিরিক্ত ব্যবহারে এটাও সমস্যা করতে পারে। এ কারণেই বার বার চিকিৎসকের পরামর্শের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার কি করনীয়?
আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের খাবারে যেন পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ডি থাকে সেটা নিশ্চিত করবেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিয়মিত বাইরে যাবেন। লম্বা ট্যুর দিতে না পারলেও আসেপাশের কোথাও ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে। বাচ্চাদের মধ্যে ঘরে বসে মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেয়ে ঘরের বাইরে নিরাপদ পরিবেশে খেলাধুলা করার অভ্যাস তৈরি করার চেষ্টা করবেন। মাঝে মাঝে ঘরের সব সদস্য কোন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খেয়ে নিতে পারেন। তবে, অন্যান্যভাবে প্রয়োজন পূরণ হয়ে গেলে বাইরে থেকে ভিটামিন খাওয়ার দরকার নাই।
ডাঃ ফাহিম আহমাদ ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দুই বছরের অধিক সময় গ্রামে কাজ করার পর শিশু রোগ সম্পর্কে উচ্চতর পড়াশুনা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এমডি(শিশু) শেষ করার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এয় জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) হিসেবে কর্মরত আছেন।