এ পর্যন্ত আমরা থ্যালাসিমিয়া কিভাবে হয়, কাদের হতে পারে, কি লক্ষণ, কি চিকিৎসা এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। এটা হবে এ বিষয়ে আপাতত আমাদের শেষ প্রবন্ধ। এবারের বিষয় কিভাবে এই থ্যালাসিমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
থ্যালাসিমিয়া প্রতিরোধে আমাদের সবার করণীয় আছে। এরই মধ্যে দেশের সরকার এর প্রচারণা চাল্লাচ্ছে। এর প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি জরুরী হচ্ছে সবার সচেতনতা। সবাই যদি সচেতন হয় তবে আস্তে আস্তে দেশের থ্যালাসিমিয়া রোগীর সংখ্যা কমতে থাকবে।
থ্যালাসিমিয়া প্রতিরোধে আমাদের কিছু কাজ করতে হবেঃ
১। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচারণা চালাতে হবে। পাঠ্যপুস্তকেও এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
২। থ্যালাসিমিয়ার বাহক নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এবং বিশেষ করে বিবাহের আগে। কারণ, একজন বাহক যদি আরেকজন বাহককে বিয়ে করে তবে তাদের সন্তানের তীব্র থ্যালাসিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি একজন বাহকের সাথে একজন স্বাভাবিক মানুষের বিয়ে হয় তবে সন্তানের সবচেয়ে খারাপ যা হতে পারে তাহল সেও একজন বাহক হতে পারে। এবং যেকোন বাহক কোন সমস্যা ছাড়াই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
বাহক নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা করা যেতে পারে। যেমন- CBC, PBF, MCV, MCHC & Hemoglobin electrophoresis
৩। গর্ভাবস্থায় নির্ণয়ঃ যখন কোন বাহক গর্ভবতী হয় তখন সন্তান কি ভালো থাকবে, নাকি বাহক হবে, নাকি তীব্র থ্যালাসিমিয়া এটা আগে থেকেই যাচাই করা সম্ভব। গর্ভের ৮-১১ সপ্তাহের সময় chorionic villus sampling নামক পরীক্ষার মাধ্যে এবং পরবর্তীতে DNA analysis এর মাধ্যমে এটা করা সম্ভব।
থ্যালাসিমিয়ার জটিলতা প্রতিরোধঃ
সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে থ্যালাসিমিয়ার জটিলতা এড়িয়ে চলা সম্ভব। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা চালাতে হবে।
এটাই আমাদের থ্যালাসিমিয়া প্রতিরোধএর উপর শেষ প্রবন্ধ। আশা করি আপনাদের কাজে আসবে। এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য করুন। আগের প্রবন্ধগুলো পড়তে চাইলে নিচের লিংকগুলোতে ক্লিক করুন।
থ্যালাসিমিয়া-একটি জন্মগত/বংশগত রক্তস্বল্পতা
থ্যালাসিমিয়া পার্ট ২ – চিকিৎসা
থ্যালাসিমিয়া পার্ট ৩ঃ খাবার ও প্লীহাকর্তন
ডাঃ ফাহিম আহমাদ ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দুই বছরের অধিক সময় গ্রামে কাজ করার পর শিশু রোগ সম্পর্কে উচ্চতর পড়াশুনা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এমডি(শিশু) শেষ করার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এয় জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) হিসেবে কর্মরত আছেন।
আসসালামু আলাইকুম আমার বাচ্চার বয়স ২৮ মাস কিছু দিন আগে টেস্ট করার পরে থ্যালোসিমিয়া ধরা পরেছে এবং ২ বার রক্ত দিয়েছি আমি এখন কি করবো সব কিছু ঠিক ঠাক করে শুধু চোখের নিচ সাদা হয়ে যায় এখন আমি ওর চিকিৎসার জন্য কি কি করতে পারি যদি বলতে যে কোথায় চিকিৎসা করারলে এই রোগের সমাধান পাবো
এবং এই চিকিৎসার জন্য কেমন খরচ হবে এবং বাংলাদেশে এর চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে কি
থ্যালাসেমিয়ার মূল চিকিৎসা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। এটা বেশ ব্যায়বহুল এবং দেশে খুব বেশি প্রতিষ্ঠান এই চিকিৎসা দিচ্ছে না। বেসরকারি খাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ১৪-১৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা যাবে। তারা মার্চ, ২০২২ এর পর থেকে শুরু করবে বলে জানিয়েছে। বিস্তারিত জানতে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া ঢাকা সিএমএইচ-এ অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। খরচ ও আনুসঙ্গিক অন্যান্য তথ্য এই মুহুর্তে আমার জানা নাই।
আপনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠান দুটিতে যোগাযোগ করলে পুর্নাঙ্গ তথ্য জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
অন্যান্য চিকিৎসা সম্পর্কে এই সিরিজের ২য় প্রবন্ধে বলার চেষ্টা করেছি। পড়তে চাইলে উপরে নীল রঙএর লেখায় লিঙ্ক আছে। ক্লিক করে পড়ে নিতে পারবেন।
আপনার বাচ্চার সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে তার ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে হবে। ধন্যবাদ।