স্বল্প ওজনের শিশুর বিশেষ যত্ন

সর্বশেষ সম্পাদনা: ১০ ডিসেম্বর ২০২১, দুপুর ০২:৫৮

আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ। ফলাফল, মৃত্যুহার কমে আসছে। কিন্তু এখনো আমাদের দেশের  মৃত্যুহার বেশি। পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৪৬। এর মধ্যে ০-২৮ দিন বয়সী বাচ্চাদের মৃত্যু প্রায় ৬০%। স্বল্প ওজনের অপরিনত অবস্থায় জন্ম নেয়া বাচ্চার মৃত্যুর ঝুকিও অনেক বেশি। এই বাচ্চাগুলোর অনেক ধরণের সমস্যা দেখা যায়। এই বাচ্চাগুলোর যত্ন কিভাবে নিবেন সেটা নিয়েই আমাদের এই প্রবন্ধ। চট করে নির্দিষ্ট অংশ দেখে নিতে নিচের তালিকা ব্যবহার করুন অথবা প্রথমবার হলে পুরোটাই পড়ে নিন।

প্রবন্ধে আলোচিত বিষয়গুলো ( নির্দিষ্ট একটি বিষয় পড়তে ক্লিক করুন)-

স্বল্প ওজনের অপরিনত শিশুর সমস্যা

জন্মের পর পরই হওয়া সমস্যা (Early Problems)

  • ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
  • রক্তে শর্করা/গ্লুকোজএর মাত্রা কমে যাওয়া
  • শ্বাসকষ্ট (respiratory distress syndrome-RDS)
  • খাবারের সমস্যা
  • জন্ডিস
  • রক্তস্বল্পতা
  • হৃদপিন্ডে ছিদ্র (PDA)

পরবর্তী সময়ে হওয়া সমস্যা (Late Problems)

  • হাড়ের সমস্যা (metabolic bone disease e.g. rickets/osteopenia)
  • চোখের সমস্যা (Retinopathy of Prematurity)
  • বৃদ্ধি কম হওয়া এবং বিকাশ বাধাগ্রস্থ হওয়া
  • সেরেব্রাল পালসি জাতীয় স্নায়ুর সমস্যা যা প্রতিবন্ধীত্বে রুপ নেয়

এজন্য স্বল্প ওজনের বাচ্চার বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার। বিশেষায়িত যত্ন শুধুমাত্র নবজাতক বিভাগেই সম্ভব। তবে, প্রাথমিক পরিচর্যার পর বাড়িতেও যত্ন নেয়া দরকার। কিভাবে যত্ন নিবেন?

প্রথমেই যেকথা বলা দরকার তা হল প্রত্যেক শিশুই আলাদা। প্রত্যেকের যত্নের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। যা শুধুই বাচ্চার চিকিতসকই বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবেন। এগুলোর সাথে সাথে নিচের বিষয় খেয়াল রাখুন-

স্বল্প ওজনের অপরিণত শিশুর যত্ন

১। বাচ্চাকে গরম রাখুন।

এর জন্য শিশুকে ভালো করে কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখুন। মাথা, হাত বা পা আলগা রাখা যাবে না। এতে দ্রুত তাপ কমে গিয়ে শিশু ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ঘরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখুন। কারণ, ঘরের তাপমাত্রার সাথে সাথে শিশুর তাপমাত্রাও কম বা বেশি হয়। এজন্য রুম হিটার, হারিকেন বা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করুন। বিশেষ করে ভোর রাতের দিকে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন।

২। বাচ্চার পুষ্টির বিষয়ে খেয়াল রাখুন।

জন্মের পর শিশুর পাকস্থলীর আকার খুবই ছোট থাকে। ফলে, একবারে বেশি পরিমাণ খেতে পারে না। এজন্য, শিশুকে ঘন ঘন খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে শালদুধ অবশ্যই দিতে হবে (যদি খেতে পারে)। কারণ, এতে রোগ প্রতিরোধকারী অনেক উপাদান থাকে, সাথে অল্প দুধের মধ্যে প্রচুর শক্তির উৎস থাকে। শালদুধকে শিশুর টীকা বলা হয়।

৩। ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিকর ঔষধ খাওয়ান।

অপরিণত ও স্বল্প ওজনের শিশুর বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত ভিটামিন ও মিনারেল (খনিজ লবন) প্রয়োজন হয়। এর সম্পুর্ণ অংশ বুকের দুধ থেকে পাওয়া যায় না। ফলে, চিকিৎসকরা কিছু ভিটামিন ও মিনারেল খেতে দেয়। এগুলো নিয়ম মত খাওয়াতে হয়। এর মধ্যে সাদারণত ফলিক এসিড, আয়রন, এবং মাল্টিভিটামিন থাকে।

৪। ইনফেকশন প্রতিরোধ করুন।

নবজাতক শিশুরা অতি সহজেই ইনফেকশন (সংক্রমণ) এর শিকার হয়। এজন্য সাবধান থাকতে হবে। প্রথম কাজ হবে শিশুকে যারা কোলে নিবে তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা। শিশুকে কোলে নেয়ার আগে হাত ধুয়ে নেয়া, বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। হাতের নখ ছোট করে কেটে রাখতে হবে। এর সাথে সাথে অসুস্থ লোকজনের থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।

৫। বাচ্চার বৃদ্ধির দিকে খেয়াল রাখুন।

জন্মের পর প্রথম সপ্তাহে শিশু তার ওজনের ১০% হারায়। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়- ৩ কেজি ওজনের একটি শিশুর ১ সপ্তাহ পরের ওজন ৩০০ গ্রাম কমে ২৭০০ গ্রাম হবে। এটা স্বাভাবিক। এর পর শিশুর ওজন বাড়া শুরু করে। প্রতিদিন কেজি প্রতি ১০ গ্রাম করে ওজন যদি না বাড়ে তবে ডাক্তারের সংগে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন, শিশু যদি দিনে ৬-৮ বার প্রস্রাব করে তবে সে যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে। এছাড়া জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে শিশু পায়খানা করবে এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রস্রাব করবে। এটাই স্বাভাবিক সীমা। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রস্রাব বা পায়খানা না করে তবে ডাক্তারের সংগে যোগাযোগ করুন।

কখন বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন?

১। যদি বাচ্চা খাওয়া বন্ধ করে দেয়।

২। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে।

৩। গায়ে কোন ঘা/ক্ষত হলে।

৪। মাথার চান্দি ফুলে গেলে।

৫। খিচুনি হলে।

৬। জ্বর আসলে বা শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে।

৭। প্রতিবার খাবার পর বমি হলে বা পেট ফুলে গিয়ে খাওয়া বন্ধ হলে বা বমি হলে।

এছাড়াও যদি অন্য কোন সমস্যা দেখা যায় তবে আপনার বাচ্চাকে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বা নবজাতক বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন।

নবজাতকের স্ক্রীনিং (Newborn Screening)

প্রত্যেক শিশুকেই কিছু রোগের স্ক্রীনিং করা দরকার। যেমন- হাইপোথাইরয়ডিজম (hypothyroidism)। এটা শিশুর বয়স যখন ৭ দিন হয় তখন করতে হয়। সঠিক সময়ে ধরতে পারলে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করলে শিশু খুবই ভালো থাকে। এছাড়া স্বল্প ওজন নিয়ে অপরিনত জন্মা শিশুদের চোখ এবং কান পরীক্ষা করতে হয় (২০-৩০ দিন বয়সের মধ্যে)।

স্বল্প ওজনের নবজাতকের যত্ন সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে আমাদেরকে নিচের ফর্ম ব্যবহার করে প্রশ্ন করুন।

 






 

1 thought on “স্বল্প ওজনের শিশুর বিশেষ যত্ন”

Leave a Comment