আপনার শিশুকে টিকা(vaccine) দিন

সর্বশেষ সম্পাদনা: ৬ নভেম্বর ২০২৩, ভোর ০৪:৪৮

সময়ের সাথে সাথে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। পরিবর্তন আসছে সব কিছুতেই। রোগ বালাইয়েরও পরিবর্তন আসছে। আসছে নতুন নতুন রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একে একে নতুন নতুন প্রতিষেধক বা টিকা (vaccine) প্রচলন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সম্প্রসারিত টীকা দান কর্মসূচী বা, Expanded Programme on Immunization (EPI) এ ব্যাপারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ৭ই এপ্রিল ৬ টি টিকা প্রদানের মাধ্যমে। একের পর এক নতুন নতুন টিকা যোগ হতে হতে আজ ১০ রোগের বিরুদ্ধে টিকা চলছে। এ পর্যন্ত দেশে এ কর্মসুচির মাধ্যমে প্রচলিত টীকাগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১। যক্ষা
২। পোলিও
৩। ডিপথেরিয়া
৪। হুপিং কফ
৫। মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকার
৬। হাম
৭। হেপাটাইটিস বি
৮। হিমোফিলাস টাইপ বি
৯। রুবেলা
১০। নিউমোনিয়া

vaccination schedule for children according expanded programme on immunization (EPI)
বাংলাদেশী শিশুদের বর্তমান টিকাদান শিডিউল

কিন্তু এ সকল সংক্রামক রোগ ছাড়াও আরো অনেক রোগে আমাদের দেশের শিশুরা আক্রান্ত হয়। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যার তুলনায় আকারে কম হওয়ায় সরকার এখনই এসব রোগের বিরুদ্ধে কোন টিকা চালু করছে না। এরমধ্যে কিছু টীকা চালুর প্রক্রিয়া চলমান আছে কিন্তু আমাদের চিন্তা করতে হবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের শিশুদের সুরক্ষার জন্য এখনই কি করতে পারি।

আমি আপনাদের জন্য ২টি টিকা (vaccine) দেয়ার ব্যাপারে চিন্তা করতে বলব।

১মঃ রোটাভাইরাস টিকা (Rotavirus vaccine)

কেন?

পাচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের যে সকল কারণে ডায়রিয়া হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় রোটা ভাইরাস দিয়ে। একটি ঢাকার হাসপাতালের গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮৩০০ ডায়রিয়ার রোগীর মধ্যে রোটা ভাইরাস দিয়ে হওয়ার হার ৩৩%। একই গবেষণায় দেখা গেছে ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চার মৃত্যুর কারণের মধ্যে ২-৩% রোটা ভাইরাস দ্বারা হয়। এ কারণে এর বিরুদ্ধে টিকা দেয়া একটা সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে।

এক মাসের ব্যবধানে ২ টা ডোজ দিতে হয়। তবে, শেষ করতে হবে বয়স ২৪ সপ্তাহ হওয়ার আগে।

২য়ঃ টাইফয়েড টিকা (Typhoid vaccine)

কেন?

টাইফয়েড জ্বর হয় সালমনেলা টাইফি নামক একটা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে। প্রাগৈতিহাসিক আমল থেকেই এটা মানব জাতির মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর এর প্রকোপ অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু তারপরও এখন অনেকেই টাইফয়েডে ভুগছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এর মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে নিরাপদ পানি ও খাবারের অভাবের কথা। সবচেয়ে বেশি ভোগে শিশুরা। এজন্য এই টীকাটিও দিয়ে দেয়া যেতে পারে।

বয়স ২ বছরের উপর হলে মাংস পেশিতে ১টা ডোজ দিতে হবে। আর ৩ বছর পর পর বুস্টার ডোজ দিতে হবে।

৩য়ঃ হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A)

হেপাটাইটিস এ দিয়ে প্রতিবছর অনেক শিশু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর মধ্যে কিছু বাচ্চার তীব্র অসুস্থতা দেখা দেয়। এই ভাইরাস খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। ফলে, শিশুদের এর থেকে নিরাপদ রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যদি স্কুল/মাদ্রাসার আশেপাশের খাবার-পানি নিরাপদ না হয়। হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাক্সিন দিয়ে নেয়া উচিত। প্রথম বার ১ বছর বয়স হওয়ার পর যেকোন এক সময়। এবং ২য় ডোজ ১ম ডোজের ০৬ (ছয়) মাস পর। ইঞ্জেকশন মাংসপেশিতে দেয়া হয়। পুর্বে (যেমন, চকলেট/লজেন্স, বিভিন্ন প্রকার সফট ড্রিংক্স, ফলের রস, দোকানে থাকে জুস, পিজ্জা/বার্গার/চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি ফাস্ট ফুড ইত্যাদি) GlaxoSmithKline(gsk) কোম্পানির Havrix বেশ বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে এই কোম্পানি বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ায় ভ্যাক্সিনটি পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরিবর্তে বাংলাদেশি কোম্পানি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর PrevaHav ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪র্থঃ করোনার টিকা (Corona Virus)

বর্তমানে পৃথিবীতে করোনাভাইরাস অতিমারি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও সরকারি হিসাবমতে সনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ (০৯/১২/২০২০ইং পর্যন্ত; বিস্তারিত https://corona.gov.bd/) এবং প্রায় ৫ হাজার মানুষ সরাসরি করোনার কারণে (covid-19) মারা গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও অচিরেই শুরু হবে। আমাদের দেশে এই টিকা আনার বিষয়ে সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করছে। তবে, করোনার টিকা শিশুদের প্রাথমিক পর্যায়ে দেয়া হবে না। কারণ, শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হলেও বা ছড়ালেও এটা তাদের ক্ষেত্রে খুব বেশি তীব্র হয় না।

করোনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুনঃ করোনা ভাইরাস অতিমারী- কি জানব? আর কি মানব?

৫মঃ কলেরার টিকা (Cholera)

এক সময় কলেরায় আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যেত। তবে, ইদানীং উন্নত চিকিৎসার কারণে এমনটা আর ঘটছে না। এছাড়া নিকট অতীতে দেশে কলেরার রোগীও ছিলো না। তবে, এখন আবার কলেরার রোগী পেতে শুরু করেছি। বাংলাদেশি কোম্পানি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস নিয়ে এসেছে কলেরার টিকা বা cholvax . এই টিকাটি খেতে হয়। দেড় মিলিলিটারের এই টিকাটির দুইটি ডোজ নিতে হয় ২ সপ্তাহের ব্যবধানে। এই টিকাটিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করা যায়। বিশেষ করে যারা ঢাকা, চট্টগ্রামের মত বড় শহরগুলোতে বাস করছেন।

সতর্কতাঃ

তবে, টিকা দেয়ার আগে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে।

১। অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সংগে পরামর্শ করতে হবে।

২। নির্দিষ্ট সময় ও মাত্রা অনুযায়ী দিতে হবে।

৩। নির্ভরযোগ্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে টিকা দেয়াতে হবে। বিশেষ করে, কোল্ড চেইন ঠিক আছে কিনা খোজ নিতে হবে। অর্থাৎ টিকা তৈরী থেকে টিকা দেয়ার সময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখা হয়েছিল কিনা।

5 thoughts on “আপনার শিশুকে টিকা(vaccine) দিন”

  1. স্যার আজকে আমার বাবুর ১মাস ৫ দিন এখন কি ওকে টিকা দিতে পারবো মানে ওর কি এখন টিকা দেওয়ার সময় হয়েছে বা ওর কত দিন বয়সে টিকা দিতে হবে

    Reply
    • টিকা জন্মের সাথে সাথে শুরু করতে হয়। বিসিজি ও পোলিও টিকার মাধ্যমে। যদি ১৪ দিনের মধ্যে এগুলো না দেয়া হয় তাহলে ৪২ দিন থেকে সব টিকা একসাথে শুরু করতে হয়। আপনার বাচ্চার জন্য এখনো আরো ১ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।

      Reply
      • স্যার আপনি কি বেবিদের টিকা দেন। মানে আপনি যে বলেছেন যে টিকা দেওয়ার আগে একজন ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করতে তাই জিজ্ঞেস করলাম।আমার বেবিকে ৪৩ তম দিনে নবীনগর সরকারি হসপিটালে টিকা দিয়ে ছিলাম প্রথম টিকা। স্যার ওকে প্রথম টিকা ৩ টি দিয়েছিল। দুই পায়ে বাম হাতে আপনি ইকটু জানাবেন ঠিক আছে কিনা। আর ২য় টিকা কত তম দিনে দিতে হবে জানাবেন স্যার।

        Reply
        • সরকারি টিকাগুলো সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দিতে হয়। আপনার টিকাদান কেন্দ্র থেকে জানিয়ে দেয়ার কথা কবে যেতে হবে। সাধারণত ২য় ভিজিট ৪ সপ্তাহ পরে হয়ে থাকে। টিকাদান কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।

          Reply

Leave a Comment