একটা সময় ছিল শিশুদের অপুষ্টি বলতেই হ্যাংলা, পাতলা বা কৃশকায়, হাড্ডিসার শিশুর চেহারা ভেসে উঠতো। এখন আর বিষয়টা এমন নাই। স্বল্পপুষ্টি(undernutrition)-এর সাথে সাথে অতিপুষ্টি(overnutrition)-ও এখন সমস্যা হয়ে দাড়াচ্ছে। এই বিষয়ে করা নানান গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিও (systematic review) ও মেটাএনালাইসিস (meta-analysis) থেকে জানা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের ০১%-২৩% (একেক ধরনের শিশুর ক্ষেত্রে হার একেক রকম) শিশু স্থুলতায় আক্রান্ত। অন্যদিকে, অন্যদিকে কিশোরদের ক্ষেত্রে ১.৭% থেকে ২৫% এর মধ্যে থাকে(doi: 10.4103/ijcm.IJCM_466_19)। স্বাভাবিকভাবেই, স্থুলতা সংক্রান্ত নানান জটিলতার শিকার শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে। সচেতন হওয়ার সময় এখনই।
শিশুদের স্থুলতার কারণ কি?
সহজভাবে চিন্তা করলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে-
কম পরিশ্রম করা + বেশি খাওয়া = স্থুলতা
তবে, বিষয়টা অত সরল না। কারণ, যারা বেশি খায় তারা এক দিক দিয়ে বেশি খেতে বাধ্য হয়। তারা ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। অন্যদিকে তারা সব ধরনের খাবারই খেতে পারে (এলার্জি, গন্ধ লাগে, পেটে সমস্যা হয়, বুক জ্বলে ইত্যাদি সমস্যা খুব কম হয়)। অন্যদিকে, তাদের শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস বা সুযোগ কম থাকে। ফলাফল, স্থুলতা।
অল্প কিছু ক্ষেত্রে রোগও শিশুদের স্থুলতা করতে পারে।
- থাইরয়েড হরমোন কম থাকলে
- ব্রেইন- টিউমার, মাথায় আঘাত (Head injury), ইনফেকশন ইত্যাদি
- কিছু ঔষধ- স্টেরয়েড বাজারে ডেল্টাসন, করটান ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। এছাড়া সোডিয়াম ভ্যালপ্রোয়েট, ইস্ট্রোজেন ইত্যাদি।
- কিছু বংশগত (genetic) রোগ – Laurence Moon Biedl Syndrome, Prader-Willi Syndrome, Beckwith-Wiedemann syndrome etc.
তবে, সবচেয়ে কমন হচ্ছে বেশি খাওয়া ও কম পরিশ্রম।
কি কি জটিলতা হতে পারে?
১। শারীরিক আকার পরিবর্তিত হয়ে যায়। ওজন বেশি হওয়ার জন্য অনেকে নানান রকম কথা বলে (bullying)। মানসিক অত্যাচারের পর্যায়ে চলে যায় অনেক সময়।
২। ঘুমের সমস্যা হতে পারে। নাক ডাকার মত সমস্যা হতে পারে।
৩। চামড়ার মধ্যে কালো দাগ হতে (acanthosis nigricans)
৪। রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। দীর্ঘমেয়াদে ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন ইত্যাদি রোগে ভোগার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
৫। অতিরিক্ত ওজনের ফলে হঠাৎ করে হাড়, জয়েন্টে নানান সমস্যা তৈরি হতে পারে।
কিভাবে শিশুদের স্থুলতা প্রতিরোধ করা যাবে?
স্থুলতা প্রতিরোধ করার নীতিটা খুব সহজ তবে সেই নীতি পরিপালন করা সহজ না। বিশেষ করে বর্তমান নাগরিক জীবনে। বাচ্চাকে বললাম ‘বেশি মোবাইল দেখা যাবে না’ কাজেই, আমাদের কৌশলী হতে হবে।
- যে সকল খাবারে চিনি ও তেল বেশি সেগুলো কম খাওয়াতে হবে। ভালো আইডিয়া হলো এমন বাজার করাই কমিয়ে দেয়া। এধরণের খাবার সবার জন্যই ক্ষতিকর।
- খেলনা কেনার সময় যেগুলোতে শক্তি খরচ হয় সেগুলো কিনতে হবে। যেমন- সাইকেল, বল-ব্যাট ইত্যাদি। এবং সেগুলো দিয়ে খেলতে অভ্যস্ত করা।
- মোবাইল/অন্য স্ক্রিন ব্যবহার না করতে দেয়া। আগে থেকে অভ্যস্ত হলে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়া।
- ছুটির দিনগুলোতে শারীরিক পরিশ্রম হবে এমন জায়গাগুলোতে বেড়াতে যাওয়া। সম্ভব হলে নিয়মিত সকালে বা বিকালে শিশুদের বাইরে খেলতে নিয়ে যাওয়া।
স্থুলতার চিকিৎসা কি?
- স্থুলতা অন্য অসুস্থতাগুলো থেকে ভিন্নরকম। ঔষধের চেয়ে জীবনযাপনের পদ্ধতি বদল করাই মূল চিকিৎসা। ঔষধের ভূমিকা সামান্য।
প্রতিদিন ৮০০-১৮০০ কি.ক্যা. এনার্জি সমৃদ্ধ খাবার খাবে (বয়স অনুযায়ী)। চিনি ও চর্বিসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। - দৈনিক৩০-৪০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম (ব্যায়াম, খেলাধুলা ইত্যাদি) করা
- টিভি, মোবাইল, কম্পিউটারের সময় কমিয়ে দেয়া
- কিছু ঔষধ যেমন- মেটফরমিন ইত্যাদি।
- যদি ডায়বেটিস, হাইপোথায়রয়ডিজম ইত্যাদি থাকে তাহলে সেগুলোর চিকিৎসা করাতে হবে।
- তীব্র কিছু ক্ষেত্রে এমন কি অপারেশনও লাগতে পারে। তবে সেগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেই সাধারণত বিবেচনা করা হয়।
ডাঃ ফাহিম আহমাদ ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দুই বছরের অধিক সময় গ্রামে কাজ করার পর শিশু রোগ সম্পর্কে উচ্চতর পড়াশুনা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এমডি(শিশু) শেষ করার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এয় জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) হিসেবে কর্মরত আছেন।
আমি এক জন থেলাসিমিয়া রগী। আমি এক জন ডক্টরের ঔষধ খাচ্ছি কিন্তু কোনো ভালো ফলা ফল পাইনি
একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞকে (হেমাটোলজিস্ট) দেখাতে পারেন।