করোনা ভাইরাসঃ একটি অতিমারি

করোনা ভাইরাস ও কোভিড-১৯ কি?

যে সকল জীবানুর মাধ্যমে মানুষের রোগ হয় তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র হচ্ছে ভাইরাস। খালি চোখে তো দেখা যায়ই না, সাধারণ মাইক্রোস্কোপেও দেখা যায় না। শুধু ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দ্বারাই একে দেখা সম্ভব ( যা যেকোন বস্তুকে ৩,০০০,০০০ গুণ বড় করে দেখায়)। অনেক ভাইরাসের মধ্যে করোনা এক জাতের ভাইরাস। এর মধ্যেও বেশ কয়েকটি ধরণ আছে (strain)। সাধারণত করোনা ভাইরাস দিয়ে ঠান্ডা-জ্বর এর মতো রোগগুলো হয়ে থাকে। তবে, এই ভাইরাস ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন করতে থাকে বলে এ থেকে মাঝে মাঝেই বড় ধরণের সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এর আগেও এটা বেশ কিছু সংক্রামক রোগ করেছে। যেমন- SARS (Severe acute respiratory syndrome), MERS (Middle East respiratory syndrome) ইত্যাদি। এবার নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে Severe acute respiratory syndrome coronavirus 2 (SARS-CoV-2)। আর এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া রোগ হচ্ছে কোভিড-১৯ (CoronaVirus Disease 2019)। 

কোভিড-১৯ এর লক্ষণ কি?

সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে জ্বর, দুর্বলতা, ও শুকনো কাশি। কিছু লোক সর্দি, গলাব্যথা, শরীর ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদিতে ভুগে। 

সাধারণত, হালকাভাবে শুরু হয়। এবং প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না এবং কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কারো কারো তো কোন লক্ষণই প্রকাশ পায় না। 

তবে, যারা বয়স্ক বা যাদের অন্য কোন শ্বাসতন্ত্র, হৃদরোগ বা অন্যান্য খারাপ রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্বক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। 

 কাজেই, যারা কাশি, জ্বর, গলাব্যথায় ভুগছিলেন এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কেন কোভিড-১৯ কে নিয়ে সবাই এত চিন্তিত?

এই রোগে মৃত্যুর হার কম। এর চেয়েও বেশি লোকের মৃত্যু হয় এমন রোগও আছে। কিন্তু এই নিয়ে সবাই চিন্তিত। কারণ, যদিও এতে মৃত্যুর হার কম, কিন্তু সংখ্যা হিসেবে কম না। আর যে মারা যায় তার জন্য এই হার ১০০%।

আরেকটি চিন্তার বিষয় হচ্ছে এই রোগ ছড়ানো প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন। যেহেতু, রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই এটা ছড়াতে থাকে এবং যে ছড়াচ্ছে সে জানেই না। 

কিভাবে ছড়ায়?

এই ভাইরাস মুলত স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। শরীরে ঢোকার রাস্তা ৩টা। মুখ, নাক ও চোখ। এজন্য, মুখে হাত দেয়াকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। (বিষয়টা একটু কঠিন, কারণ অবচেতন মনে আমরা দিনে প্রায় ৩০০০ বার আমাদের মুখ, নাক বা চোখে হাত দেই।

এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি দিলে তা বেশ কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকে ঐ সময় যদি কেউ শ্বাসের সাথে এই ভাইরাস নিয়ে নেয় তাহলেও সে আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য একে অন্য থেকে কমপক্ষে ৬ ফিট দুরুত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে (আমাদের দেশে অবশ্য ৩ ফিটের কথা বলা হয়েছে (social distancing)। 

আবার, আক্রান্ত ব্যক্তি যে সকল স্থান স্পর্শ করে সেগুলোতেও এই ভাইরাস থেকে যায়। যেমন- ডোরনব বা ছিটকিনি, টেবিল বা অন্যান্য জিনিস। এজন্য করমর্দন তো করা যাবেই না। এমন কি টেবিল বা অন্যান্য জিনিসেও হাত দেয়া যাবে না। এবং এই জিনিসগুলোকে নিয়মিত স্যানিটাইজার বা অন্য এন্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা কি?

কোভিড-১৯ এর কোন চিকিৎসা নেই। মুলত সহায়তা মুলক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে বাচিয়ে রাখতে পারলে এক সময় তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই তাকে সাড়িয়ে তুলে।

বাংলাদেশের সরকার কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে?

বাংলাদেশ সরকার কোভিড-১৯ এর প্রতিরোধে নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-

১। সাধারণ ছুটি। বিগত ২৫শে মার্চ থেকে ৪ই এপ্রিল পর্যন্ত এই ছুটি ঘোষিত ছিল। এখন একটু শিথিল আকারে আগামী ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। একই সাথে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে হওয়া সকল অনুষ্ঠান বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

২। IEDCR (Institute of Epidemiology, Disease Control and Research) এর নেতৃত্বে সরকার দেশব্যাপি রোগ পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। হটলাইন চালু করেছে (৩৩৩, ১০৬৫৫, ১৬২৬৩)। এ নাম্বারগুলোতে ফোন দিয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য ও সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া একটি তথ্যবহুল ওয়েবসাইটও চালু করেছে (www.corona.gov.bd)। এতে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে। 

৩। বেশ কয়েকটি হাসপাতালকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকার নির্ধারিত করেছে। ( হাসপাতালের তালিকা)

৪। উপযুক্ত ক্ষেত্রে আইসোলেশনকোয়ারেন্টাইন করা হচ্ছে। 

এই রোগ থেকে বাচতে আমি কি করতে পারি?

এ রোগ থেকে বাচার জন্য আমাদের বেশ কিছু করনীয় আছে। এজন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এবং সবাইকেই নিচের অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে হবেঃ

  • ঘন ঘন দুই হাত সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড করে ধুয়ে নিন। বিশেষ করে বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর, সন্দেহজনক কোন কিছু স্পর্শ করার পর, টয়লেট ব্যবহারের পর ইত্যাদি।
  • হাঁচি-কাশির সময় ভদ্রতাসুচক নিয়ম মেনে চলুন। অর্থাৎ রুমাল/টিস্যুতে কাশি দিয়ে নির্ধারিত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন। সাথে রুমাল বা টিস্যু না থাকলে হাতের কনুইএর ভাজে কাশুন। এতে বাতাসেও জীবানু ছড়াবে না আবার হাতেও লাগবে না। হাতে লাগার সম্ভাবনা থাকলে হাত সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধুয়ে নিন। 
  • নিজে অসুস্থ হলে (কাশি থাকলে বা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত থাকলে), বা অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে, বা বিদেশ ফেরত হলে মাস্ক ব্যবহার করুন। 
  • জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন না। এবং জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলবেন।
  • স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শের জন্য ১৬২৬৩ অথবা ৩৩৩ -এ যোগাযোগ করুন। 

করোনা বিষয়ক আমাদের অন্যান্য লেখাগুলোও পড়তে পারেন-