মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশে অনেক পশু কোরবানী হচ্ছে প্রতি বছর। সরকারী হিসাব মতেও এবছর প্রায় ১ কোটি ১৬ লক্ষ পশু কোরবানী হয়েছে। নিয়ম অনু্যায়ী বেশিরভাগ গোস্ত গরীব দুখীদের মধ্যে বিতরণ করা এবং আত্বীয়স্বজনকে আপ্যায়ন করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর বেচে যাওয়া অতিরিক্ত গোস্ত সাধারণত ফ্রিজে/ অন্যভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিছু দিন পর পর বের করা হবে অল্প অল্প করে। বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক আয়োজনে রান্না করে খাওয়ানো হবে। কিন্তু রান্না করার জন্য কিভাবে ফ্রিজে জমানো এই গোস্তকে রান্নার উপযোগী (defrost) করবেন? কাজটা সঠিকভাবে না করলে স্বাদ যেমন নষ্ট হবে, তেমনই এতে ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন হবে। কাজেই, সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করা জরুরী।
তিনটা পদ্ধতি আছে এই জমে বরফ হয়ে থাকা গোস্ত গলানোর জন্যঃ
১। রেফ্রিজারেটরে রেখে রান্নার উপযোগী করা
২। ঠান্ডা পানি ব্যবহার করে রান্নার উপযোগী করা
৩। মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করে রান্নার উপযোগী করা
রেফ্রিজারেটরে রেখে রান্নার উপযোগী করা
সাধারণভাবে আমরা যাকে ফ্রিজ বলি তার দুটি অংশ থাকে। একটা (সাধারণত ছোট হয়) ফ্রিজ/ডিপফ্রিজ এবং অন্যটা হল রেফ্রিজারেটর। রেফ্রিজারেটরে তাপমাত্রা কম থাকে, কিন্তু শুন্য ডিগ্রী থাকে না। ফলে, এ খানে রাখা গোস্ত বা অন্যকিছু বরফ হয় না। এই রেফ্রিজারেটরকে ব্যবহার করে গোস্ত গলানো যেতে পারে।
পদ্ধতিঃ গোস্তের যে অংশ গলাতে হবে তা একটা পাত্রে নিন। পলিথিনের প্যাকেটের মধ্যে থাকলে তা রেখে দিন। এর ফলে গোস্ত থেকে বের হওয়া পানি বা জলীয় বাষ্প অন্য খাবারকে প্রভাবান্বিত করবে না। গন্ধও ছড়াবে না। এভাবে প্রায় ২৪ ঘন্টা রেখে দিলেই( প্রায় ২.৫ কেজি গোস্তের ক্ষেত্রে) আস্তে আস্তে বরফ গলে যাবে। গোস্তের পিন্ডের আকারের উপর নির্ভর করে আসলে কত সময় লাগবে। ঠিকভাবে গলছে কিনা তা মাঝে মাঝে উলটেপালটে দেখতে হবে।
সুবিধা/অসুবিধাঃ এই পদ্ধতি সহজ এবং নিরাপদ। তবে, এটা সময় সাপেক্ষ হওয়াতে আগেভাগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি দ্রুত গলানোর প্রয়োজন হয় তবে অন্য পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে হবে।
ঠান্ডা পানি ব্যবহার করে রান্নার উপযোগী
পদ্ধতিঃ একটা মুখবন্ধ করা যায় এমন প্লাস্টিকের প্যাকেট ব্যবহার করতে হবে। প্রথম যে পলিথিনের প্যাকেটে গোস্ত ছিল তা সহই নতুন প্যাকেটের ভিতর দিতে হবে। এরপর ভিতরের বাতাস যতটুকু বের করা যায় বের করে দিতে হবে। এরপর একটা বড় পাত্রে ঠান্ডা (অর্থাৎ স্বাভাবিক তাপমাত্রার, গরম না) পানি নিতে হবে। এই পানির মধ্যে গোস্তের প্যাকেটটি সম্পুর্ণ ডুবিয়ে রাখতে হবে। ফলে, গোস্ত আস্তে আস্তে গলবে এবং পানির তাপমাত্রা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। আধাঘন্টা পর পর পানি পরিবর্তন করে দিতে হবে।
এভাবে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই গোস্তের পিন্ড রান্নার উপযোগী হয়ে যায়।
সুবিধা/অসুবিধাঃ এটা দ্রুত পদ্ধতি। সমস্যা হল গলানোর পর সাথে সাথেই ব্যবহার করতে হবে। নতুবা স্বাদ পরিবর্তন এবং ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়বে। আর যদি আবার ফ্রিজে রাখতে হয় তবে অবশ্যই রান্না করে রাখতে হবে। এভাবে গলানো গোস্ত আবার ফ্রিজে রেখে দেয়া যাবে না।
পানি বা মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে রান্নার উপযোগী করা গোস্ত রান্না না করে আবার ফ্রিজে রাখা যাবে না।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করে রান্নার উপযোগী করা
পদ্ধতিঃ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই গোস্ত গলিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা সম্ভব। এর জন্য পরিমানমত গোস্ত ওভেন উপযোগী পাত্রে নিয়ে ওভেনের ভিতর রাখতে হবে। এর পর মডেল ভেদে কয়েক মিনিটেই গলিয়ে ফেলা যায়। বেশিরভাগ ভালো ওভেনের একটা ‘Defrost’ বোতাম আছে। সেটা টিপলেই নির্দিষ্ট সময় নিজে নিজেই সেট হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে মাইক্রোওয়েভকে থামিয়ে (pause) করে গোস্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি কোন পাশ গরম পাওয়া যায় তবে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।
সুবিধা/অসুবিধাঃ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রান্নার উপযোগী গোস্ত পাওয়া যায়। তবে, সাথে সাথেই রান্না করে ফেলতে হবে। দেরি
করলেই স্বাদ এবং গুন নষ্ট হবে। আরেকটা সমস্যা হল মেশিনের প্রাপ্যতা এবং এর জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ফ্রিজার বার্ন (Freezer Burn) । যদি প্যাকেট করার সময় ভেতরে বাতাস থেকে যায় তবে গোস্তের উপরের স্তরের রঙ পরিবর্তন হয়। রান্না করার আগে এই অংশ কেটে ফেলে দিতে হবে। নতুবা স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
সঠিক নিয়মে খাবার সংরক্ষণ এবং তার ব্যবহার দিন দিন গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠছে। আমরা যতই প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি, ততই সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার না করার কারণে ক্ষতির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। কাজেই, আসুন সচেতন থাকি, ভালো থাকি।
ডাঃ ফাহিম আহমাদ ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দুই বছরের অধিক সময় গ্রামে কাজ করার পর শিশু রোগ সম্পর্কে উচ্চতর পড়াশুনা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এমডি(শিশু) শেষ করার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এয় জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) হিসেবে কর্মরত আছেন।