জ্বর ও খিচুনি
যদিও জ্বর ও খিচুনি এক সাথে হওয়ার সবচেয়ে কমন কারণ জ্বরজনিত খিঁচুনি (febrile convulsion/febrile seizure)। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে মস্তিষ্কের ঝিল্লী বা পর্দার প্রদাহ (meningitis), মস্তিষ্কের প্রদাহ (encephalitis)। এগুলোর হার বেশি না হলেও খুবই গুরুতর হয়ে থাকে। চিকিৎসা সঠিক সময়ে না হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। কাজেই, জ্বর ও খিচুনি আছে এমন শিশুর দ্রুত ও উপযুক্ত চিকিৎসা খুবই জরুরী।
অন্যদিকে, জ্বর ছাড়াও খিঁচুনি হতে পারে। যেমন- মৃগীরোগ (Epilepsy), রক্তের লবণ কম/বেশি হয়ে যাওয়া (Electrolyte imbalance), ব্রেইন টিউমর (Brain tumor) ইত্যাদি।
কাদের ফেব্রাইল কনভালসন (Febrile Convulsion)এর ঝুকি বেশি?
জ্বরজনিত খিঁচুনি (Febrile Convulsion বা, Febrile Seizure) যেকোন ছোট বাচ্চার মধ্যে দেখা দিতে পারে। তবে, কিছু বিষয় এর ঝুকি বাড়াতে পারে। জ্বরজনিত খিঁচুনির জন্য সাধারণ ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে-
১। বয়স (Age)– ০৬ মাস থেকে ০৫ বছরের মধ্যে শিশুদের মধ্যে জ্বরজনিত খিঁচুনি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। পাঁচ বছর বয়সের পর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
২। পারিবারিক ইতিহাস (Family history)
৩। হঠাৎ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া (Temperature spike)
৪। সংক্রমণ (infection): জ্বরজনিত খিঁচুনি প্রায়শই ভাইরাল সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ঘটে। যেমন-
- শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ (যেমন ফ্লু বা সাধারণ ঠান্ডা),
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণ,
- কানের সংক্রমণ, বা মূত্রনালীর সংক্রমণ।
কিছু ভাইরাস শরীরের তাপমাত্রা আরও দ্রুত বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা খিঁচুনি শুরু করে।
৫। বিকাশগত বিলম্ব (Developmental Delay): বিকাশগত বিলম্ব বা আগে থাকা স্নায়ুর রোগের কারণে জ্বরজনিত খিঁচুনি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। যেমন-সেরেব্রাল পালসি, পুর্বে মেনিনজাইটিস হয়েছিল এমন শিশু ইত্যাদি।
৬। অকাল জন্ম (Premature baby): সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুরা পূর্ণ-মেয়াদী শিশুদের তুলনায় জ্বরজনিত খিঁচুনি/ফেব্রাইল কনভালশনে বেশি ভুগে থাকে।
৭। লিঙ্গ(Sex): কোন কোন গবেষণায় বলা হয়েছে যে ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হতে পারে। তবে, এই পার্থক্য খুব বেশি না।
এছাড়া, শিশুদের আয়রন (iron) এর অভাবে রক্তস্বল্পতা, জিংক (Zinc) ইত্যাদি থাকলেও ঝুকি বেশি থাকে।
খিঁচুনির উদ্দীপক (Trigger) কি হয়?
জ্বরজনিত খিঁচুনি হওয়ার প্রাথমিক ট্রিগার হল শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি। জ্বর সাধারনত শ্বাসযন্ত্র, অন্ত্র, কান, বা মূত্রনালীর ইত্যাদি সংক্রমণের জন্য হয়ে থাকে।
কয় ধরণের ফেব্রাইল কনভালসন/জ্বরজনিত খিঁচুনি আছে?
ফেব্রাইল কনভালসন/ জ্বরজনিত খিঁচুনি (febrile convulsion/febrile seizure) দুই রকম হতে পারে
- সাধারণ/সহজ (simple) এবং
- জটিল (complex)
জ্বর জনিত খিঁচুনি/ফেব্রাইল কনভালসন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ/সহজ (simple)। এ থেকে তেমন জটিলতা হয় না। এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকই বিস্তারিত জানাবেন।
কোন শিশুর খিচুনি (যেকোন কারণেই হোক) হলে কি করবেন?
খিঁচুনির সময়-
- শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ জ্বরজনিত খিঁচুনি সংক্ষিপ্ত হয় এবং ক্ষতি না করে নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়।
- শুরুর সময় নোট করুন। কি কি ঘটছে খেয়াল রাখুন। খিঁচুনি শেষ হয়ে গেলে শিশুকে শান্ত এবং আশ্বস্ত করুন।
- শিশুকে জোড় করে আটকে রাখবেন না/নড়াচড়ায় বাধা দেবেন না। জোড় করে আটকে রাখতে গেলে শিশুর শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
- শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখুন। নিশ্চিত করুন যে শিশুটি সঠিকভাবে শ্বাস নিচ্ছে। খিঁচুনির পরও শ্বাসকষ্ট অব্যাহত থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
খিঁচুনি শেষে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি খিঁচুনি সংক্ষিপ্ত হয় এবং শিশুটি পরে ভালো মনে হয়, তবুও। জ্বর কেন হলো বোঝা এবং আর যেন না হয় সেজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ডাঃ ফাহিম আহমাদ ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দুই বছরের অধিক সময় গ্রামে কাজ করার পর শিশু রোগ সম্পর্কে উচ্চতর পড়াশুনা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এমডি(শিশু) শেষ করার পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এয় জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) হিসেবে কর্মরত আছেন।