শিশু বা কিশোরী থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত,আমাদের দেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি যেই সমস্যাটি নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন,তা হলো লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব ও চুলকানি। কখনো কখনো তা শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাদা স্রাব ও চুলকানি নির্দিষ্ট কোনো রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশিত হয়। তাই এই ব্যাপারগুলো অল্প বিস্তর জানা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।
লিউকোরিয়া কি?
নারী শরীরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যে নিঃসরণ হয় তা সাধারণত বর্ণ ও গন্ধহীন, পানির মতো হয়।আর লিউকোরিয়া হলো এই স্বাভাবিক নিঃসরণের আধিক্য।কখনো কখনো পরিমাণ এতো বেশি হতে পারে যে কাপড়ে হলদেটে অথবা ঈষৎ বাদামি বর্ণের দাগ লেগে যেতে পারে এমনকি কখনো কখনো প্যাড পরিধানের প্রয়োজনও পড়তে পারে।তবে অতিরিক্ত সাদা স্রাবের সাথে চুলকানি থাকলে কিন্তু আমাদের অন্য কিছু চিন্তা করতে হবে।
লিউকোরিয়ার কারণ কি?
ক) শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে: ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যের কারণে নারী জীবনের বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত পরিমাণে সাদা স্রাব হতে পারে,যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক,যেগুলোকে রোগ সংশয়ের কোনো কারণ হিসেবে ধরা হয় না। যেমন-
- বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে
- ওভ্যুলেশনের সময়,যখন ডিম্বাণু তৈরি হয়
- মাসিকের কয়েক দিন আগে
- গর্ভাবস্থায়
- যৌন উত্তেজনায়
খ) দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে গ) দুর্বল স্বাস্থ্য বা অপুষ্টিজনিত কারণে ঘ) জরায়ু মুখের দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন বা পলিপ ঙ) জরায়ু নীচের দিকে নেমে যাওয়া চ) প্রজনন তন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী ইনফেকশন
দুর্গন্ধযুক্ত স্রাবের কারণ কি?
জরায়ু,জরায়ু মুখ বা যোনীপথের টিউমার বা ক্যান্সার,কখনো কখনো বাচ্চারা খেলতে খেলতে ভিতরে কিছু ঢুকিয়ে ফেললেও এইরকম দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হতে পারে।
স্রাবের সাথে চুলকানি কি কি কারণে হতে পারে?
যদিও এর কারণ হিসেবে মোনিলিয়াসিস বা ক্যানডিডা নামক ছত্রাকের সংক্রমণই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তবে কৃমির সংক্রমণে ও এন্ট্রিবায়োটিক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এরকম সমস্যা হতে পারে।ডায়াবেটিস রোগীদের সাদা স্রাব ও চুলকানির সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
কেমন করে বুঝবেন কি হচ্ছে,কেন হচ্ছে?
চিকিৎসকের সাহায্য নিবেন।প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন।চিকিৎসক আপনার রোগের লক্ষণ,সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে রোগ নির্ণয় করবেন ।
পরিত্রাণের উপায় কি?
চিকিৎসা শুরু হবে কারণ অনুসন্ধানের পর,কারণ ও লক্ষণ অনুযায়ী।বেশিরভাগ সময় ঔষধ সেবনেই সুস্থ হয়ে গেলেও জরায়ু মুখের কোনো কোনো সমস্যা বা টিউমার,পলিপ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ছোট খাটো অপারেশনের দরকার হতে পারে।এছাড়া যেসব কারণে স্রাব বা চুলকানি হচ্ছে সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।যেমন: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ,জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া বন্ধ করা ইত্যাদি।
ভালো থাকার জন্য নিজেদের করনীয় কি?
যে ব্যাপারটা সবসময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা হলো ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা,যেগুলো মানলে নারীরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন –ক) আঁটোসাঁটো কাপড় পরিধান করা থেকে বিরত থাকা।খ) সুতির অন্তর্বাস পরিধান করা।গ) ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার না করে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা।
ঘ) মাসিক চলাকালীন সময়ে ৪-৬ ঘন্টা পর পর স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলানো।ঙ) প্রসাব বা পায়খানার পর সামনে থেকে পিছনের দিকে পরিষ্কার করা।চ) সবসময় জায়গাটা শুকনো রাখতে হবে।ছ) কোনো প্রসাধনী সামগ্রী যেমন, পাউডার বা সুগন্ধি,সাবান ইত্যাদি ভিতরে যাতে প্রবেশ না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।জ) স্বামী সহবাসের পর সাথে সাথে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া ও প্রস্রাব করা।ঝ) নিয়মিত ব্যায়াম করে নিজেকে সক্ষম রাখবেন।
অসুস্থতা কে রুখতে হলে সুস্থ থাকার নিয়মকানুন জানতে হবে।নিজের গোপন সমস্যা লোক লজ্জায় চেপে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা খুবই জরুরি।যদিও কোভিড-১৯ এর ঝুঁকির কারণে জনসমাগম এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ,তবে অতি জরুরি নয়,এমন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে।
ডাঃ ফারহানা শারমীন অভি, এমবিবিএস,বিসিএস।
গাইনী এবং অবস বিভাগ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে, উচ্চতর ডিগ্রীর এমডি (গাইনী এন্ড অবসটেট্রিক্স) সমাপনের দ্বারপ্রান্তে আছেন।