করোনা ভাইরাস থেকে কিভাবে বাঁচবেন?
করোনা ভাইরাস খুবই সংক্রামক ভাইরাস। বিশেষ করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি লক্ষণ প্রকাশের আগেই অন্যদের কাছে ছড়ানো শুরু করে দেয়। ফলে, এই ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে হলে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এবং সামাজিক দূরত্বের পদেক্ষেপগুলো মেনে চলতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো হচ্ছে-
সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা
সাবান পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া। প্রতিবার কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড। বিশেষ করে সন্দেহজনক বস্তু বা সারফেস স্পর্শ করার পর এবং ঘরে ফেরার পর হাত ধুতে হবে। এলকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করাও একই লাভ দিবে। তবে, সাবান পানি ব্যবহার করা অধিক নিরাপদ।
একজন অন্যজন থেকে কমপক্ষে ১-২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। হ্যান্ডশেক ও অন্যান্য সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। এ উদ্দেশ্যে মসজিদে, বা বাজারে না যাওয়া। ঘর থেকে না বের হওয়া বা বের হলেও প্রয়োজনীয় কাজ সেড়ে দ্রুত ঘরে ফিরে আসা।
কাশি থাকলে সবসময় মাস্ক পরিধান করা। কাশির পর মাস্ক নিরাপদ স্থানে ফেলে দেয়া। মাস্ক না থাকলে হাতের কনুইএর ভাজে কাশি দেয়া।
হাত দিয়ে চোখ, মুখ বা নাক না ধরা
জিনিসপত্র ধরার মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান থেকে ভাইরাস হাতে চলে আসে। যা চোখ, নাক বা মুখে হাত দিলে সংক্রমণ ঘটে।
উপযুক্ত ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার করা
সাধারণ ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করা। তবে, স্বাস্থ্যকর্মীরা বিশেষত যারা কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসাদাতারা সম্পুর্ণ ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপরকরণ ব্যবহার করবেন (মাস্ক, গাউন, ফেসফিল্ড, গ্লাভস ইত্যাদি)।
চিত্রঃ হাত ধোয়ার পদ্ধতি
করোনা ভাইরাস মুলত হাতের মাধ্যমে ছড়ায়। যখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি কাশি দেয় ভাইরাস (রেস্পিরেটরি ড্রপলেটের ভিতরে) বাতাসে ভেসে থাকে। তবে, ভারী হওয়ার কারণে বেশিক্ষণ ভেসে থাকতে পারে না, মেঝেতে পড়ে যায়। অথবা আশেপাশে থাকা বস্তুর উপর (যেমন- টেবিল, চেয়ার, বই ইত্যাদি) পড়ে থাকে। যখনই কেউ এগুলোতে হাত দেয় ভাইরাস হাতে চলে আসে। কাজেই, এই জিনিসগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এ সবই অফিসের বা ঘরের বাইরের পরিবেশের জন্য। ঘরের জন্য সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হল ঘর থেকে কম বের হওয়া, জরুরী প্রয়োজনে বের হলে দ্রুত ঘরে ফিরে আসা এবং ফিরে আসার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা।
তবে, কোন জিনিস/সারফেস কতক্ষণ পর পর স্যানিটাইজ করতে হবে তা জানতে হলে জানতে হবে কোন জিনিসের উপর ভাইরাস কতক্ষণ বেচে থাকে। সেজন্যে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস থেকে তৈরি করা আমাদের নিচের সংকলন।
যারা করোনা রোগীর কাছে নিয়মিত যেতে বাধ্য হন (সেবাপ্রদানকারী বা চিকিৎসক/নার্স ইত্যাদি) তারা ব্যক্তিগত সুরক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। কে কোনটা ব্যবহার করতে পড়ুন পিপিইঃ কোনটা ব্যবহার করবেন?
কোন বস্তুর উপর করোনা ভাইরাস কতক্ষণ বাঁচে?
বস্তু/সারফেস | সময় | দুর করার উপায় |
---|---|---|
কাচ | প্রায় ৯ দিন পর্যন্ত | সাবান-পানি বা এলকোহলভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার (Hand Sanitizer) |
স্টেইনলেস স্টিল | প্রায় ৩ দিন | সাবান-পানি বা এলকোহলভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার (Hand Sanitizer) |
ডোরনব/টেবিল | প্রায় ৯ দিন পর্যন্ত | সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার (Hand Sanitizer) |
প্লাস্টিক | প্রায় ২-৩ দিন | সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার (Hand Sanitizer) |
কাগজ | প্রায় ২-৩ দিন | আল্ট্রাভায়োলেট লাইট দিয়ে |
এলুমিনিয়াম (ক্যান, পাত্র) | ২-৪ ঘন্টা | সাবান-পানি |
খাবার | খাবারের মাধ্যমে ছড়ানোর কোন প্রমান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। | |
পানি | পানিতে এখনো এই ভাইরাস পাওয়া যায় নি | |
কাপড় | প্রায় ২৪ ঘন্টা | সাবান-পানি |
তথ্যসুত্রঃ ওয়েবএমডি (WebMD), বিবিসি (BBC), নিউইয়র্ক টাইমস (The New York Times)
-
নোট ১ঃ
কাশির পর রেসপিরেটরি ড্রপলেট (respiratory droplet) বাতাসে প্রায় ৩ ঘন্টা ভেসে থাকে। এরপর আশেপাশের ফ্লোর/বস্তুর উপর পড়ে থাকে। স্থির বাতাসে বেশি সময় ভেসে থাকে।
-
নোট ২ঃ
কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে ধাতববস্তু, কাচ বা প্লাস্টিকের উপর করোনা ভাইরাস প্রায় ৯ দিন ভেসে থাকে।
-
নোট ৩ঃ
সাধারণত চুল, দাড়ি, বা কাপড়ের উপর ভাইরাস আটকে যায় না। গেলেও নড়াচড়ার সময় ছুটে যায়। যদি না দীর্ঘসময় কোন কোভিড-১৯ রোগীর কাছে থাকা হয়।
কিভাবে পরিষ্কার করবেন?
ভাইরাসের বাইরের স্তরটি চর্বি দ্বারা তৈরি। ফলে, সাবান বা এলকোহল দ্বারা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো হাত ধোয়ার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করা। এবং জিনিসপত্র পরিষ্কার করার জন্য সাবান পানি ব্যবহার করা যায়। বা দ্রুত নষ্ট করার জন্য ৬২-৭১% এলকোহল দিয়ে তৈরি স্যানিটাইজার, ০.৫% হাইড্রোজেন পারক্সাইড বা ব্লিচিং পাউডার, ০.১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট বা ঘরে ব্যবহারের ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলে ১ মিনিটেরও কম সময়ে ভাইরাসকে ধ্বংস করা যায়।
করোনা ভাইরাসকে ঠেকাতে সবাইকে যার যার অংশ করতে হবে। যত বেশি মানুষ নিয়ম মেনে চলবে তত দ্রুত আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। stay home, stay safe.